ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট কাটলেও কাটেনি খাবারের

Chakaria Picture 07-07-2017 .মিজবাউল হক, চকরিয়া :

চকরিয়া বন্যা কবলিত এলাকায় কোন রকম বিশুদ্ধ পানির সংকট কাটলেও খাবারের অভাব কাটেনি। হাজার হাজার পানিবন্দি পরিবারের মধ্যে এক লাখ টাকার শুকনো খাবার বিতরণ করলেও পর্যাপ্ত নয় বলে জানান বন্যা দূর্গত এলাকার মানুষ। এতে বন্যার্তদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, গত চারদিনের ভারিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানি চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভাসহ ৯টি ওয়ার্ডে ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ে। বানবাসি মানুষের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠে বিভিন্ন আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো। উপজেলার গভীর নলকূপ গুলো বন্যার পানিতে ঢুবে থাকায় তিব্রভাবে পানি সংকটে পড়ে। বিশুদ্ধ পানির অভাবে শতশত বন্যার্থ মানুষ ঢলের পানি দিয়ে রান্না বান্নার কাজ ও জীবন ধারণ করতে হয়েছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী দপ্তর সূত্র জানা যায়, উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় প্রায় সাড়ে ৪ হাজার গভীর নূলকূপ রয়েছে। বেশিরভাগ এলাকার নুলকূপ বন্যার পানিতে ঢুবে থাকায় বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দেয়। প্রায় ৭৫টি নুলকূপে সরাসরি বন্যার পানি প্রবেশ করে। আরও ১৫টি নুলকূপে বন্যার পানিতে ঢুবে যায়। এতে হাজার হাজার বানবাসি মানুষ বিশুদ্ধ পানির অভাবে পড়েন।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কামাল আহমদ জানান, উপজেলায় সাড়ে ৪হাজার গভীর নুলকূপে বিভিন্ন ভাবে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। বন্যার পানি কমার পর গভীর নূলকূপ গুলোতে ব্লিশিং পাওটার দিয়ে পানি বিশুদ্ধ করে খাবার উপযোগী করা হয়। বন্যার পানি মিশ্রিত পানি খেলে স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতি ও বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি হয়। একটি মগের মধ্যে এক চামচ ব্লিশিং পাওটার মিশিয়ে ২০মিনিট পর নুলকূপের মুখে দিলে পানি জীবানু মুক্ত হয়ে যায়। এরপর পানি বিশুদ্ধ হয় বলে তিনি জানান।

এদিকে মাতামুুহুরী নদীর পানি কিছুটা কমলেও বাড়ি-ঘর থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় বানভাসিরা এখনও দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। বিশেষ করে বন্যা কবলিত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে চকরিয়ার আঞ্চলিক মহাসড়কের উপর। সেখানে প্রায় ৪-৫’শ পরিবার এখনো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে। তাদের ঠিকমতো দুই বেলা খাবার জুটছে না। সরকারী বা বেসরকারীভাবে কোন ত্রান সামগ্রী দেয়নি। গত চার দিন ধরে শুকনো খাবার খেয়ে বেচে থাকার কথা জানান কৃষক আবদুল কাদের সহ তার পরিবার। মহাসড়কের ওপর বসবাসকারী শতশত নারী-পুরুষ খাদ্য অভাবের কথা জানিয়েছেন।

সড়কে শতশত পরিবার গরু, ছাগল নিয়ে বসবাস করছেন। সেই সঙ্গে গো-খাদ্যের ব্যাপক সংকট তো রয়েছেই। তাই বাধ্য হয়েই বানভাসী পরিবার গুলো গরু, ছাগল নিয়ে এক সাথে আঞ্চলিক মহাসড়কে গাদাগাদি করে বসবাস করছে। কেউ ছোট্ট একটি ছাপড়া ঘর, কেউ বা খোলা আকাশের নিচে গবাদী পশু নিয়ে সড়কে দিনাতিপাত করছে। গরুর খাবার জোটাতে না পেরে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে। বন্যায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হলেও সরকারিভাবে গো-খাদ্য সংকটে কোন উদ্যোগ এ পর্যন্ত নেয়া হয়নি।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বন্যা দূর্গত চকরিয়া উপজেলার বিএমচর, পূর্ববড়ভেওলা, ঢেমুশিয়া, পশ্চিম বড়ভেওলা ও কোনাখালী ইউনিয়নের শতশত গবাদী পশু বন্যায় আক্রান্ত হয়ে সড়কের উপর অবস্থান করছে। বিএমচর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের আবদুল কাদের জানান, গত চার দিন ধরে সড়কের উপর বসবাস করছি। তার ঘরটি বন্যার পানিতে ঢুবে রয়েছে। তার পরিবার ও পালিত গরু-ছাগল নিয়ে বসবাস করছি সড়কের উপর।

তিনি আরও বলেন, পুরো এলাকায় বন্যার পানিতে ঢুবে থাকায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। গবাদী পশুদের জন্য তিব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারিভাবে কোন টিম গবাদী পশুর চিকিৎসার উদ্যোগ গ্রহণ করে নাই। পশুদের খাদ্য এবং চিকিৎসার অভাবে রোগা হয়ে পড়েছে বলে জানান ওই কৃষক।

বন্যা দূর্গত এলাকার জন্য এ পর্যন্ত এক লাখ টাকা পাওয়ার কথা জানান চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: সাহেদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, চকরিয়ায় ভয়াবহ বন্যা হয়েছে। দুই লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিলো। আভ্যন্তরীণ সড়ক গুলো যান চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বানবাসি মানুষের জন্য চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সরকারিভাবে বরাদ্দ পেলেই বিতরণ করা হবে বলে তিনি জানান।

পাঠকের মতামত: